লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?
♥মা লক্ষ্মী♥
বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবার হল সাপ্তাহিক
লক্ষ্মী আরাধনার দিন।বাংলায় বৃহস্পতিবারকে বলা হয় লক্ষ্মীবার। এই দিন লক্ষ্মীপূজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। কিন্তু আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে শুদ্ধ আচারে অথচ
সহজে লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?
"#ফর্দ" ঃবৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপূজার উপকরণ অতীব সামান্য।
যেগুলি লাগে সেগুলি হল—
সিঁদুর, ঘট ১টি, ধান সামান্য, মাটি সামান্য,
আমপল্লব ১টি, ফুল ১টি,দুর্বা সামান্য,
তুলসীপাতা ২টি, ফুল, কাঁঠালি কলা বা হরীতকী
১টি, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সামান্য আতপচাল ও জল। কোনো দ্রব্য সংগ্রহ করতে না পারলে,পূজার শেষে সেই দ্রব্যটির কথা মা লক্ষ্মীর কাছে উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে।কালীঘাটের পটচিত্রে লক্ষ্মীর এক বিরল মূর্তি।লক্ষ্মী-পরিচয় যে দেবতার পূজা করেন, সেই দেবতার পরিচয় আগে জেনে নিতে হয়।
লক্ষ্মীকে আমরা টাকাপয়সার দেবী ভাবি, আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ওইটুকুতেই নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দেন না,তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন।এককথায় লক্ষ্মীপূজা করলে,মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ওচরিত্রবান হয়।স্বামীপ্রমেয়ানন্দ বলেছেন,কেবল টাকাকড়িই ধননয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার
চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া।
যাঁরা সাধক তাঁরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তিধন লাভের জন্য।’
@লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন?
কেউ কেউ বলেন, এটি বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের পরিবর্তিত রূপ।মা লক্ষ্মী আসলে তাঁর স্বামীর বাহনটিই ব্যবহার করেন। কিন্তু এই রূপ পেঁচার কেন? লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার
করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—
এইকথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে,লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’।তাছাড় ধনসম্পত্তি,সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই
হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়।
রাতে সবাই যখন ঘুমায়,তখন পেঁচা জেগে থাকে।পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়।
জ্ঞাতব্য নিয়মকানুন লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার
মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের
ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে,যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে।তাছাড়া শাস্ত্রে আছে,প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন।সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের
কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার
পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের
পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।লক্ষ্মীপূজায়
ঘণ্টা বাজাতে নেই।লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে
নেই।কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও
দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়।লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে,
তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন।
সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল।পূজার পর ব্রতকথা পাঠ
করতে হয়। লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের
বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না।
লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়।তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান। লক্ষ্মীপূজা প্রতিমা,সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে হয়ে থাকে।
পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায়
লক্ষ্মীপূজা করেন,পশ্চিমবঙ্গীরা লক্ষ্মীর
ধানপাত্রে বা ঘটে পূজা করেন।কারো কারো বিশেষ পারিবারিক লক্ষ্মীপ্রতীক রয়েছে। যাঁর যা আছে,বা যাঁদের যা নিয়ম তাঁরা তাতেই লক্ষ্মীপূজা করবেন।পূজার পূর্বে পূজাস্থান
পরিষ্কার করে নিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন।
পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন। পূজার সময় অন্যমনস্ক হবেন
না বা অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না।
মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন। পূজার সময় অন্য কথা বললে বা অন্যমনস্ক হলে মন্ত্র পাঠাদি করে লক্ষ্মীপূজা করাই শ্রেয়।কিন্তু একমনে আন্তরিকভাবে লক্ষ্মীপূজা করলে বিনা মন্ত্রেই
পূজা সিদ্ধ হয়। অবশ্য দীক্ষিত হলে গুরুমন্ত্রেও
পূজা চলে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন,মন্ত্রপাঠ ও
পূজাক্রিয়াদিতে অভিজ্ঞব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পূজা
করবেন না।বিনা মন্ত্রে পূজা শুধু সেই সবে অনভিজ্ঞদের জন্য।দেবতারা লক্ষ্মীনারায়ণের
পূজা করছেন, সেকালের বইয়ের অলংকরণ।
পূজাপ্রণালী প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল
নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায়জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন।যে কোনো পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যকে জল দেওয়ার
নিয়ম, তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল
নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর
সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন।
এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল-নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর
ছিটিয়ে দেবেন।এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ
করে নিতে হয়।এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য
ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার
উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না।
ঘটে একটি আমপল্লব(যাতে বিজোড় সংখ্যায়
আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও
পরাতে পারেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন।
লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল—
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-
সৌম্যয়োঃ।পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ
সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্
রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
মন্ত্রটি পাঠ করতে ভাল।
নয়তো লক্ষ্মীর রূপটি চোখ বুজে মনে মনে খানিকক্ষণ চিন্তা করবেন। এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন। আবাহন
মন্ত্রটি হল—
ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ
ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম
পূজান গৃহাণ।
সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন,এসো মা লক্ষ্মী,বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ
তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি স্থির হয়ে থাকো মা। তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার
হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল-নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে লক্ষ্মীকে দেবেন।লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল। এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন।এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন। লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন।
এরপর লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন।শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন। তারপর ফুল
দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।
মন্ত্র—এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।(শ্রীঁ উচ্চারণ হবে শ্রীং,নমঃ উচ্চারণ হবে নমহ।)পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন।পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন।
তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন।মা লক্ষ্মীর পেচককেও একটি ফুল
দেবেন। আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র যথাশক্তি জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন।
শেষে নিম্নোক্ত
মন্ত্রে প্রণাম করবেন—
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তুতে।।
মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন। এরপর ব্রতকথা পাঠ করবেন বা শুনবেন।
বিঃ দ্রঃ কেউ কেউ লক্ষ্মীকে পান-সুপারিও দেন।
আপনাদের বাড়িতে তেমন প্রথা থাকলে দেবেন।
বাড়িতে যে লক্ষ্মীর পাঁচালি আছে সেটিই
পড়বেন। লক্ষ্মীর ব্রতকথা বা পাঁচালি বাজারে সুলভ।বাড়িতে পাঁচালি নাথাকলে,যেকোনো একটি কিনে নিয়ে পাঠ করলেই চলে।
=================================
লক্ষ্মীর পাঁচালী
=================================
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল
আকাশ ।
ধীরে ধীরে বইতেছে মলয়
বাতাস ।।
বৈকুন্ঠেতে একাসনে লক্ষ্মী
নারায়ন ।
করিতেছে কত কথা সুখে
আলাপন ।।
সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব কত কথা
হয় ।
শুনিয়া পুলকিত হয় দেবীর হৃদয় ।।
অকস্মাৎ দেবর্ষি নারায়ন
স্বরে ।
আসিলেন ভক্তি চিত্তে
বৈকুন্ঠ নগরে ।।
প্রনাম করি দেবর্ষি বলেন বচন
।
মর্ত্যে দুর্ভিক্ষ মাগো কি
ভীষন ।।
ঋষি বলে মা তুমি চঞ্চলা মন ।
সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।।
তাই মর্ত্যবাসী কষ্ট কত পায় ।
দেখি তাহা কেমনে মম
প্রানে সয় ।।
অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট
ভোগে ।
মরিতেছে অনাহারে কৃশকায়
রোগে ।।
ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ
করি দেয় ।
স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে
ক্ষুধার জ্বালায় ।।
দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে
জীবগন ।
দয়া করে মাগো তুমি করো
নিবারন ।।
এই দুর্দশা দেখি প্রানে নাহি
সয় ।
করো নিবারন মাগো হইয়া সদয়
।।
নারদের বাক্য শুনি কহেন
হরিপ্রিয়া
বিশ্বমাতা আমি দেবী
বিষ্ণুজায়া ।।
যে যেমন করে সে তেমন পায়
।
সে দোষে কর্মফল, করে হায়
হায় ।।
মহামায়ার স্বরূপে নারী
সত্যবচন ।
মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।।
সদাচার কুল শীল দিয়া
বিসর্জন ।
ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা
বর্জন ।।
এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে ।
কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে
তাহারে ।।
নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন
কেবা ।
ভুলেও না করে নারী পতি
পদসেবা ।।
যথায় স্বেচ্ছায় ঘুরিয়া
বেড়ায় ।
গুরুজনে নানা কটুবাক্য শোনায়
।।
সর্বদা হিংসা করে না
মানে আচার ।
হিংসাতে তার মজে
সংসার ।
ছড়া নাহি দেয়,
প্রভাতকালে ।
লক্ষ্মী সে স্থান ছাড়িয়া
চলে ।।
অতিথি যদি উপস্থিত হয়
দ্বারে ।
দূর দূর করি তারায় তাহাড়ে ।।
যেবা গুরু-ব্রাহ্মণ দেখি ভক্তি
নাহি করে।
মম নিবাস কভু নহে সেই ঘরে ।।
এঁয়োতির চিহ্ন সিঁদুর শাখা
না দেয় ।
বাসী কাপড়ে যথা তথা
বেড়ায় ।।
স্নান নিত্য নাহি করে যে
মনুষ্য গণ ।
ত্যাজিয়া তাহারে, করি
অন্যত্র গমন ।।
তিথি ভেদে যেবা নিষিদ্ধ
দ্রব্য খায় ।
হই না কভু তার ওপর সহায় ।।
যে মনুষ্য ভক্তিভাবে একদশী
না করে ।
কদাপি নাহি থাকি তাহার
ঘরে ।।
উচ্চহাসি হাসিয়া যে নারী
ঘোরে ।
গুরুজন দেখি ঘোমটা না
টানে ।।
বয়োজ্যেষ্ঠ দেখি যারা
প্রনাম না করে ।
সন্ধ্যাকালে ধূপ দীপ নাহি
দেয় ঘরে ।।
ঠাকুর দেবতা আদি কভু না
পূজে ।
সাধু সন্ন্যাসী দেখি
হাসাহাসি করে ।।
এমন নারী যে গৃহেতে বসতি
রয় ।
লক্ষ্মী ত্যাজে তাহাকে
জানিবে নিশ্চয় ।।
এত বলি লক্ষ্মী দেবী বলেন
মুনিকে ।
কর্মদোষে মনুষ্য নিজ ফল
ভোগে ।।
ঋষি বলে মাগো তুমি
জগতজননী ।
সন্তান কে করো ক্ষমা হে
সনাতনী ।।
দূর করি দাও মা ভীষন মহামার
।
বর দিয়ে জীবেরে করহ
নিস্তার ।।
এই বলি বিদায় হইলেন মহামুনি
।
চিন্তিত হইয়া কহেন
নারায়নী ।।
কহ কহ কৃপাময় প্রভু নারায়ন ।
কিরূপে নিস্কৃতি পাইবে
জীবগণ ।।
লক্ষ্মীদেবীর কথা শুনি কহেন
জনার্দন ।
শুন দেবী মন দিয়া আমার বচন ।।
তুমি যে পরমা প্রকৃতি দেবী
ভগবতী ।
তোমার কৃপায় দূর হইবে
অনাসৃষ্টি ।।
যে জন গুরুবারে লক্ষ্মী ব্রত
করে ।
সুখে জীবন কাটাইবে তোমার
বরে ।।
লক্ষ্মী কভু নাহি ছাড়িবে
তাহারে ।
জীবনান্তে আসিবে সে
বৈকুন্ঠ নগরে ।।
মর্ত্যে গিয়া কর এই ব্রত প্রচার
।
তোমার কৃপায় দূর হইবে
অনাচার ।।
গমন করেন দেবী শুনি হরির
কথা ।
পেঁচকে মর্ত্যে আইলেন
জগতমাতা ।।
অবন্তী নামক নগরী পাশে এক
বন ।
তথা আসি মা কমলা উপস্থিত
হন ।।
হেথায় ছিল ব্যবসায়ী ধনেশ্বর
রায় ।
অগাধ ধন, চৌদ্দ কূল বসি খায় ।।
পত্নী সুমতি ছিল সাত কুমার ।
সংসার ছিল তার লক্ষ্মীর
ভান্ডার ।।
যথাকালে ধনেশ্বর করিল গমন ।
বিধবা হইলো পত্নী- ভাগ্যের
লিখন ।।
সর্বদা কলহ করে সপ্ত বধূ গণ ।
মারমার কাটকাট হইত সর্বক্ষণ ।।
সংসার রচিল যে যার মতো
যার ।
সুখের পরিবার হইল ছারখার ।।
এই দুঃখে ধনেশ্বর পত্নী ভীষন
শোকে ।
বনে গমন করিল জীবন
ত্যাজিতে ।।
সেই বনে বৃদ্ধা বসি করে হায়
হায় ।
এই বুঝি লেখা ছিল
বিধাতার খাতায় ।।
এই দেখি হরিপ্রিয়া বৃদ্ধা রূপ
ধরে ।
ছদ্দবেশে দেখা দিলেন
ধনেশ্বর ভার্যারে ।।
দেবী কহেন কে তুমি দাহ
পরিচয় ।
কোথা হতে আসিলে বলোহ
আমায় ।।
স্থান বড় ভয়ানক নির্জন বন ।
হেথা হোথা নানা জন্তু করে
বিচরণ ।
বুড়ি বলে মাগো পোড়া
কপাল আমার ।
ভয় আমি করি না আর মরিবার ।।
এত বলি বৃদ্ধা সব কথা কন ।
শুনিয়া দুঃখিত হইলো কমলার
মন ।।
বৃদ্ধা প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া কহেন
বচন ।
আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের
লিখন ।।
যাও তুমি গৃহে ফিরি করো
লক্ষ্মী ব্রত ।
অবশ্যই আসিবে সুখ পূর্বের মতো
।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি
এঁয়োগন ।
ব্রতের সকল কিছু করিবে
আয়োজন ।।
আসন পাতি তাহে লক্ষ্মী
মূর্তি বসাইবে ।
আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট
সাজিবে ।।
বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবদ্য
সকল ।
দিবে কলা, শর্করা আতপ তণ্ডুল
।।
একটি করে মুদ্রা রাখিবে
লক্ষ্মী ঘটে ।
একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী
ভাঁড়ে ।।
আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর
তৈলে গোলা।
চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে
দিবে আলিপনা ।।
ধূপ দীপ জালি সম্মুখে
রাখিবে ।
আসন পাতি লক্ষ্মী পূজায়
বসিবে ।।
একমনে পূজা দিবে লক্ষ্মী
নারায়ন ।
পূজাশেষে ব্রত কথা করিবে
পাঠন ।।
না করিয়ো পূজায় ঘণ্টা বাদন
।
পূজান্তে উলু দিবে মিলি
এঁয়োগন ।।
এই ভাবে যেই জন লক্ষ্মী ব্রত
করে ।
কোন দুঃখ তার আর নাহি
রহিবে ।।
শুনিয়া বৃদ্ধা কহিল আনন্দিত
মনে ।
কে মা তুমি কহো পরিচয়
দানে ।।
এই শুনি লক্ষ্মী দেবী স্ব মূর্তি
ধরে ।
ভক্তি চিত্তে বৃদ্ধা কাঁদে
ভূমি ওপর পড়ে ।।
লক্ষ্মী বলে যাহ তুমি নিজের
ভবন ।
গুরুবারে আমাকে পূজিবে
নিয়ম মতোন ।।
এত বলি বিদায় লইল সাগর
নন্দিনী ।।
( মা লক্ষ্মী সাগর রাজার
কন্যা ) ।
ঘরে ফিরি আসিল ধনেশ্বর
পত্নী ।।
বধূ গনে কহিল লক্ষ্মীর ব্রতের
কথন ।
গুরুবারে লক্ষ্মী ভজে সপ্ত বধূ
গণ ।।
ধীরে ধীরে হইল সুখের ভবন ।
যেমন আছিল ঘর পূর্বের মতোন ।।
0 comments:
Post a Comment